দেশজুড়ে

মরিয়ম মন্নান বললেন, ‘কে কী বলল যায় আসে না’

  প্রতিনিধি ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৪:২৪:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ

মাকে দেখে যা বললেন মরিয়ম মান্নান (ভিডিও)

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

নিখোঁজের ২৮ দিন পর রহিমা বেগমকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে গতকাল শনিবার অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রোববার সকালে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে গিয়ে দূর থেকে মাকে দেখেছেন মরিয়ম মান্নান।

পরে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি মাকে দূর থেকে চোখে দেখেছি। আমার কলিজাটা ঠাণ্ডা হয়েছে।আমি আমার মায়ের কাছে যেতে চাই। আমি আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কে কী বলল তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার চাওয়া ছিল আমার মা।’

তিনি আরও বলেন, ‘২৭ দিন ধরে আমার মা নিখোঁজ। ময়মনসিংহে একটা লাশ পাওয়া গেছে। আমি সেখানে গিয়েছি সেটা আমার কি অন্যায়? এটা আমার মাকে খোঁজার একটা অংশ। আমি প্রত্যেকটা যায়গায় গিয়েছি মাকে খুঁজতে।’

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন যে, রহিমা বেগম ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে রয়েছেন। এরপর দৌলতপুর জোনের এডিসি আবদুর রহমান ও দৌলতপুর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই বাড়িতে পৌঁছায়।

পুলিশের টিম দেখে যে, রহিমা বেগম ওই বাড়িতে বসে দুইজন নারীর সঙ্গে গল্প করছেন। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও রহিমা কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।

তবে ওই বাড়ির বাসিন্দারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, রহিমা তাদেরকে জানিয়েছেন তিনি বেশ কয়েকদিন চট্টগ্রাম ও মোকসেদপুরে ছিলেন। এরপর ১৭ আগস্ট বোয়ালমারীতে কুদ্দুসের বাড়িতে যান। তখন তার একটি ব্যাগে দুই প্যাকেট বিস্কুট, কিছু কাগজপত্র ও পরনের কয়েকটি কাপড় ছিল।

ডেপুটি কমিশনার জানান, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা রহিমা বেগমকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি। সে কারণে ট্রাকিং করা সম্ভব হয়নি।

রহিমা অপহরণ মামলাটির তদন্ত দৌলতপুর থানা পুলিশের কাছ থেকে পিবিআইতে গেছে। তারপরও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ মামলাটির ছায়া তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল। পিবিআই তদন্ত করে দেখবে রহিমা বেগম কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিল এবং কোথায় কোথায় ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুদ্দুসের ছেলে আলামিন, কুদ্দুসের স্ত্রী ও ভাইয়ের স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে।

তিনি কি আসলেই অপহরণ হয়েছিলেন, নাকি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বলেন, এটা পিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের মাধ্যমে বিস্তারিত উদঘাটন করে জানাবে।

এদিকে, রহিমাকে উদ্ধারের খবর পেয়ে রাতে দৌলতপুর থানায় ছুটে যান এ মামলায় আটক রফিকুল আলম পলাশ ও নুরুল আলম জুয়েলের বাবা আনসার উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, তার ছোট ছেলে রফিকুল আলম পলাশ চাকরি করেন এবং বড় ছেলে নুরুল আলম জুয়েল মুদি দোকানি। তার দুই ছেলেকে রহিমাকে কথিত অপহরণের মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন।

তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে জমির সীমানা নিয়ে মতবিরোধ থাকায় মামলা দিয়ে হয়রানি ও সম্মানহানি করা হয়েছে। রহিমা ও তার সন্তানরা কেন এই অপহরণের নাটক সাজালো সে ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এ মামলায় আটক মহিউদ্দিন ও গোলাম কিবরিয়ার বড় ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, রহিমা বেগমের তিন বিয়ে। মেয়ের ঘটকালি করতে আসে বেলাল, সর্বশেষ রহিমা বেগম তাকে বিয়ে করেন। তিনি বলেন, তার ছোট ভাই গোলাম কিবরিয়া রহিমার সৎ ছেলের কাছ থেকে জমি কেনে। সেই জমিতে যাতে যেতে না পারে সেজন্য আত্মগোপন করে অপহরণ মামলা দিয়ে তাকে আটক করিয়েছে।

তার দাবি, মরিয়ম মান্নান নাটকবাজ। পুলিশ ও সাংবাদিকদের মিথ্যা কথা বলে প্রায় এক মাস বিভ্রান্ত করেছে। সে মাদকাসক্ত, তার একাধিক বয়ফ্রেন্ড আছে। ময়মনসিংহে গিয়েও মরিয়ম নাটক সাজায়। তিনি আটককৃতদের মুক্তি এবং রহিমা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যদের শাস্তির দাবি করেন।

এ ব্যাপারে রহিমা বেগমের বড় ছেলে মোহাম্মদ সাদী বলেন, তার মা উদ্ধার হওয়ায় তারা খুশি। তার কোনো বোন অপহরণ নাটক সাজিয়েছে বলে তার কাছে মনে হয় না। তারপরও তার মাকে জিজ্ঞাসা করা হোক, যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে যে তারা অপহরণ নাটক সাজিয়েছে তাহলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হোক।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ আগস্ট নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকার বাড়ির সামনে থেকে রহস্যজনক নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। তাকে অপহরণ করার অভিযোগ তুলে পরদিন থানায় মামলা করেন রহিমার মেয়ে আদুরি আক্তার।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by