দেশজুড়ে

মিরসরাইয়ে কমান্ডার শফির বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নানা অভিযোগ

  প্রতিনিধি ১৬ অক্টোবর ২০২২ , ৬:৪২:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ

আশরাফ উদ্দিন, মিরসরাই প্রতিনিধিঃ
মিরসরাইয়ের এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের নামে টাকার বিনিময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানো ও সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অযুহাতে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন ১লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। অভিযুক্ত ওই কমান্ডার হলেন ১২ নং খৈয়াছড়া ইউনিয়ন কমান্ডার শফিউল্লাহ শফি। এছাড়া ওই কমান্ডারের অন্যায় আবদার আর অত্যাচারে খৈয়াছড়া ইউনিয়নের সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

তারা অভিযোগ করে বলেন, যে কোন ইস্যুতে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে টাকা দাবি করেন। মুক্তি যোদ্ধাদের অফিসিয়াল যে কোন তথ্য পেতে বা যে কোন নথির জন্য তিনি ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা দাবি করেন। ক্ষেত্রবিশেষে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকাও দাবি করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধাদের এক একজনের কাছ থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে দাবি করেছেন। তাকে টাকা না দিলে কারো ঘর হবেনা বলেও হুমকি দিয়েছেন বলে যানা যায়।

এছাড়া এক মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে ভাতা উত্তোল করে আত্মসাথের অভিযোগ ও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সোনালি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, তিনি এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর স্বাক্ষর নকল করে টাকা তুলে নিতেন। সন্দেহ হলে ওই মহিলার সাথে যোগাযোগ করলে তা ধরা পড়ে। পরে তিনি ওই মুক্তিযোদ্ধার ৬ মাসের ভাতার টাকা জরিমানা দিতে বাধ্য হন।

খৈয়াছড়া ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ছন্দানি জানান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিউল্লাহ শফি আবাসনের জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছেন। টাকা না দিলে ঘর হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ছন্দানির মেয়ে জানান, মুক্তিযোদ্ধা শফি আঙ্কেল যে কোন ইস্যুতেই টাকা চায়। ঘরের জন্য তিনি আমাকে ফোন করে ৫০হাজার টাকা চেয়েছেন। এছাড়া তিনি বলেছেন ১ টাকা কম হলেও ঘর পাবে না।

একই ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা মোমিনের স্ত্রী আক্তারের জাহান জানান, আবাসন অনুমোদিত হলে কমান্ডার দাবি করেছেন তাকে সম্মান করেতে হবে। তবে কত টাকা দিতে হবে সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলেন নাই। তিনি বলেন, ঘরের ভিটা তৈরিতে তার প্রায় ৪লক্ষ টাকা ইতোমধ্যে খরচ হয়ে গেছে। তার উপর কমান্ডার শফি সম্মানি দাবি করছেন। এভাবে যদি ৪ থেকে ৫লাখ টাকা খরচ হয়ে যায় তাহরে আর ঘর পেয়ে কি লাভ।

খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার সুমন জানান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফির অত্যাচারে এলাকার সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা অতিষ্ট। তার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযোগ আসছে।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক দু:খ প্রকাশ করে বলেন, পুরো মিরসরাই উপজেলায় ২জন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছাড়া বাকি সবাই আর্থিক দুর্নীতির সাথে জড়িত। ইউনিয়ন কমান্ডার সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে যে টাকা নেন তার ভাগ উপজেলা কমান্ডার যদি না পায় তাহলে এত অভিযোগের পরও তার বিরুদ্ধে উপজেলা কমান্ড কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না কেনো। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানোর টাকা উপজেলা কমান্ড না নিলে ফাইল মন্ত্রণালয়ে যায় কেমনে?

খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা তুজুল ইসলাম জানান, কমান্ডার শফিউল্লাহ শফির বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। নামের সাথে মিল থাকায় আবুল খায়ের নামে এক অমুক্তিযোদ্ধাকে টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। আবাসনের জন্য যে সকল মুক্তিযোদ্ধারা আবেদন করেছেন তাদের সকলের কাছে আর্থিক সুবিধা চেয়েছেন। তার যন্ত্রণায় সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা অতিষ্ঠ। সব কিছু জানার পরও উপজেলা কমান্ড তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

অভিযুক্ত ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার শফিউল্লাহ শফি জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করার জন্য তার যাতায়াতের জন্য কিছু খরচ চেয়েছেন। অসুস্থতার কারনে রিজার্ভ গাড়ি ছাড়া যাওয়া সম্ভব নয় ৫-১০ হাজারে হবে না । তাই ৫০ হাজার করে টাকা চেয়েছি। তবে না দিলেও কোন সমস্যা নেই। কারো কাজের ব্যত্যয় ঘটবে না। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানোর বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানাই নাই। কারো কাছ থেকে টাকা ও গ্রহণ করি না।

এ ব্যাপারে মিরসরাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির হোসেন জানান, যে অভিযোগ গুলি আসছে তা একেবারে অসত্য নয়। তবে অভিযোগ গুলির ব্যাপারে আমাদেরকে ইতোপূর্বে কেউ অবগত করে নাই। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বাতিলসহ ইউনিয়ন কমান্ডার শফির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। যেহেতু বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধাদের তাই সম্মান রক্ষার্থে সংবাদ প্রকাশ না করলে কৃতজ্ঞ থাকবো ।

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by