চট্টগ্রাম

যত্রতত্র পার্কিং, অদক্ষ ড্রাইভিং দুর্ঘটনার কবলে বাঁশখালীর সড়ক

  প্রতিনিধি ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৪:০২:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

যত্রতত্র পার্কিং, অদক্ষ ড্রাইভিং দুর্ঘটনার কবলে বাঁশখালীর সড়ক

চট্টগ্রাম জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা বাঁশখালী। এই উপজেলার মেরুদন্ড বেয়ে বয়ে গেছে বাঁশখালী আনোয়ারা, পেকুয়া মগনামা জেটিঘাট ও চকরিয়াসহ দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান আঞ্চলিক সড়ক। প্রায় ৪৪ কিলোমিটারের এ সড়ক দিয়ে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব কম থাকায় বাড়তি যানবাহনও চলাচল হয়। সড়কে বাড়তি যানবাহন হিসেবে যুক্ত হয়েছে এসআলম, এসআর ও সৌদিয়া পরিবহণ, তার ওপর আছে বাঁশখালী সুপার সার্ভিস ও স্পেশাল সার্ভিস।

প্রধান সড়কের ফুটপাথ অবৈধভাবে দখল করে বসেছে দোকান মালিকরা। একদিকে সংকুচিত সড়ক পথ তার ওপর অবৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশার ছড়াছড়ি। এতে সড়কে বাড়তি যানবাহন চলাচল ও নির্বিকার ট্র্যাফিক ব্যবস্থার কারণে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। আর এই যানজট নিরসনে ট্র্যাফিক পুলিশও অসহায়। তাদের কোনো উদ্যোগই যেন কাজে আসছে না। ফলে এসব নানাবিধ সমস্যার কারণে যেমন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তেমনি বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।

বাঁশখালীতে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার সিএনজি চালিত অটোরিকশা সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব গাড়ির বেশিরভাগ চালকের নেই লাইসেন্স। এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক, মাদকাসক্ত এবং বিভিন্ন মামলার আসামি এসব অটোরিকশা নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাস্তায়। সমিতির নেতা ও শ্রমিকদের দাপটে অসহায় ট্র্যাফিক পুলিশও। অটোরিকশা চলাচল বন্ধে চট্টগ্রাম জেলা ট্র্যাফিক পুলিশ বিভাগ থেকে অভিযান পরিচালনায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশ। কিন্তু কিছু শ্রমিক নেতা, মাসোহারা খাদক কথিত সাংবাদিক, উচ্ছৃঙ্খল যুবকের হুমকিতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়ছে ট্র্যাফিক পুলিশরা।

বেপরোয়া সিএনজি, যত্রতত্র পার্কিং ও অদক্ষ ড্রাইভিংয়ের কারণে যেমন বাড়ছে যানজট তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনাও। গত এক বছরে অর্ধশতাধিক সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এতে নিহত হয় বেশ কয়েকজন যাত্রী-পথচারী ও অঙ্গহানি হয় শিশু থেকে ভিন্ন বয়সের লোকদের।সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চাঁদপুর, গুনাগরী, রামদাশ হাট, বৈলছড়ি, চেচুরিয়া, মিয়ার বাজার, উপজেলা সদর, শীলকূপ টাইম বাজার, মনছুরিয়া বাজার, চাম্বল বাজার, নাপোড়া বাজার ও প্রেম বাজার এলাকায় রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে শত শত অটোরিকশা। এতে মূল রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঢুকতে এবং চলাচলে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। দিনভর প্রবেশপথে লেগে থাকে যানজট।

বিশেষ করে চাম্বল বাজার ও গুনাগরিতে সিএনজির রাজত্বে দিনের বেশিরভাগ সময় জ্যাম লেগে থাকে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে শহরে যাওয়া আসা করা যাত্রীরা। এসব সিএনজি সড়কের দুইপাশ দখল করে বসিয়েছে পার্কিং। যত্রতত্র যাত্রী উঠানামায় বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনাও। বাঁশখালীর সচেতন মহল মনে করেন, ‘প্রধান সড়কের ফুটপাথ দখলমুক্ত করা গেলে, সিএনজি সমিতি ও ট্র্যাফিক পুলিশের যৌথ উদ্যোগে অটোরিকশা চালকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়ানো গেলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটা কমে যাবে। তবে, সড়ক সম্প্রসারণের বিষয়টি তারা গুরুত্বের সাথে দেখছে।

‘বাঁশখালী অটোরিকশা (সিএনজি) পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁশখালীতে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অটোরিকশা আছে। আমরা চাইলেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছিনা। আমি নিজেও লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে ছয় বছরেও লাইসেন্স পাইনি। নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। আছে দালালের দৌরাত্ম্যও। অধিকাংশ দক্ষ ড্রাইভার লাইসেন্স না থাকার কারণে পুলিশি হয়রানির শিকার হয়।

গত একমাসে আমাদের সমিতির প্রায় দুইশতাধিক অটোরিকশাকে মামলা দেয় ট্র্যাফিক পুলিশ। আমরা বৈধভাবে সবকিছু চাইলেও তা হচ্ছে না।’এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মকর্তা আল আমিন দৈনিক ভোরের দর্পণ কে বলেন, ‘বাঁশখালীতে আগে ট্র্যাফিক পুলিশ ছিল না। এখন ট্র্যাফিক পুলিশ থাকায় অনেকটা সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। লাইসেন্সবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে মাঠে আছি।

অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযানে গেলেই বিভিন্ন সমিতির সভাপতি, সম্পাদক, নেতা এবং সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিসহ আরও উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিরা এসে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন। তিনি আরো বলেন, আগে পুরো বাঁশখালীতে লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা চলতো টোকেনের বিনিময়ে।

বর্তমান ওসি তোফায়েল আহমদের সহায়তায় টোকেন বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে। লাইসেন্সের বিষয়টি বিআরটিসি’র। আমরা ড্রাইভারদের সর্বোচ্চ পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি। আমরা চাই সুশৃঙ্খলভাবে সড়কের নিয়ম মেনেই যানবাহন চলুক।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by