ঢাকা

অপরাধীকে বাঁচাতে ধারালো অস্ত্রের স্থলে ভোতা অস্ত্রের সার্টিফিকেট

  প্রতিনিধি ২৫ মে ২০২২ , ৮:৩৩:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

এস এম বাবুল:

জখমি সার্টিফিকেটে ধারালো অস্ত্রের স্থলে ভোতা অস্ত্রের আঘাত দেখিয়ে সার্টিফিকেট প্রদানের অভিযোগ উঠছে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার লুবনা খানমের বিরুদ্ধে এবং ওই অসংগতি সার্টিফিকেট সংশোধনে গড়িমসির অভিযোগ উঠছে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মঞ্জুর এলাহীর বিরুদ্ধে।  ২৩ মে ২০২২ সোমবার বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিষ্টার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে জখমি চিকিৎসার প্রকৃত সনদ চেয়ে এবং এ অনিয়মের সহিত জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের আকুতি জানিয়ে অভিযোগ করেছেন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কামরুল হোসাইন।

অভিযোগে তিনি শরীরের আঘাতের সাথে হাসপাতাল থেকে দেওয়া জখমি সার্টিফিকেটের বাস্তব কোন মিল নেই উল্লেখ করে কর্তব্যরত চিকিৎসক জখমি সার্টিফিকেট প্রদানকালে ধারালো অস্ত্রের আঘাত (শার্প কাটিং গিভিয়াস) না দেখিয়ে ভোতা অস্ত্রের আঘাত (বøান্ট উইপন সিম্পল) দেখিয়ে সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন। আর এই অসংগতিপূর্ণ সার্টিফিকেট সংশোধনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দারস্থ হলে তিনি শরীরের আঘাতের চিহ্ন, ওই সময়ের জখমের ছবি দেখে সার্টিফিকেট সংশোধনের আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে কর্তব্যরত চিকিৎসক লুবনা খানমের সাথে কথা বলে তা সংশোধনে অস্বীকৃতি জানান।

জখমি সার্টিফিকেটে অসংগতি ও রেফারের বিষয় জানতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. লুবনা খানমের সাথে যোগাযোগ করা হলে ভোরের দর্পণকে তিনি বলেন, কামরুল হোসাইনের ডান হাতের জখম স্থান থেতলানো থাকায় এক্সরে ব্যতীত সেলাই দেওয়া সম্ভব ছিলোনা। রাতের বেলায় এক্সরে করার সুযোগ না থাকায় ওই রোগীকে রেফার করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সার্টিফিকেট প্রসঙ্গে তিনি জানান, সার্টিফিকেটে কোন অসংগতি নেই। কামরুল হোসাইনকে সঠিক সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগকারি কামরুল হোসাইন ভোরের দর্পণকে বলেন, তাঁর ডান হাতে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের কোপ এতটা গুরুতর ছিলো যা কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক সেলাই করতে না পেরে তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেন।

পরে আত্মীয়-স্বজনের পরামর্শে নরসিংদীর পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার ডান হাতের মাংসের ভিতর ও বাহিরে মোট আঠাশটি সেলাই দেন এবং তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করেন। দীর্ঘ চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে তিনি জানতে পারেন কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যে জখমি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে তাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের কথা উল্লেখ না করে ভোতা অস্ত্রের আঘাতের কথা বলা হয়েছে।

এ ছাড়াও শরীরের আঘাতের সাথে হাসপাতাল থেকে দেওয়া জখমি সার্টিফিকেটের বাস্তব কোন মিল না থাকায় চলতি মাসের ৮ তারিখ ওই সার্টিফিকেটের ফটোকপি নিয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মঞ্জুর এলাহীর কাছে গেলে তিনি আমার শরীরের আঘাতের চিহ্ন ও ওই সময়কার জখমের ছবি দেখে হাসপাতালের অন্য ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করে সার্টিফিকেট সংশোধন করে দেওয়ার আশ্বস্ত করে মূল কপি আনতে বলেন। মূল কপি আনার পরে লিখিত দেওয়ার কথা বলেন। লিখিত দিতে রাজি হলে, সার্টিফিকেটের ডুপ্লিকেট কপি আসামী পক্ষের হাতে আছে কিনা জানতে চান? সার্টিফিকেটের কোন কপি যদি আসামী পক্ষের কাছে যায় তাহলে ঝামেলা হবে। এরপর দিব দিচ্ছি বলে দীর্ঘক্ষন বসিয়ে রেখে আমাদের চলে যেতে বলেন।

এ বিষয়ে জানতে, কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মঞ্জুর এলাহীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে হলে তিনি ভোরের দর্পণকে বলেন, কামরুল হোসাইনের দুই হাতেই ইনজুরি ছিলো এক হাতের গিভিয়াস দেওয়া হয়েছে। অন্য হাতের কোপের স্থান এ্যাবড়ো থেবড়ো থাকায় গিভিয়াস দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়া তিনি যে এক্স-রে রিপোর্টগুলি এনেছে তা সঠিক নয়। আমরা এ বিষয় নিয়ে টিম বসিয়ে দেখেছি কর্তব্যরত ডাক্তার যে সার্টিফিকেট দিয়েছেন তা সঠিক আছে। সার্টিফিকেটে কম-বেশি লেখার সুযোগ নেই। সার্টিফিকেটের মুল কপি আনতে বলা লিখিত দিয়ে সার্টিফিকেট পরিবর্তন ও আসামী পক্ষের কাছে ডুপ্লিকেট কপি আছে কিনা এমন প্রসঙ্গ আনতেই এ কর্মকর্তা বলেন, মুল সার্টিফিকেট আনতে বলেছি সত্য, তবে অন্য যে অভিযোগ গুলো করা হয়েছে তা সঠিক নয়।

পলাশ থানার ওসি তদন্ত ও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম ভোরের দর্পণকে বলেন, ঘটনার পরে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহতদের দেখতে গিয়ে কামরুল হোসাইনের ডান হাতের জখম দেখেছেন। জখমের ধরন দেখে মনে হয়েছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে বলে জানালেন এ কর্মকর্তা। কর্তব্যরত চিকিৎসক জখম স্থান সেলাই দিতে না পেরে তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেছেন। পরে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নিয়াজ মোর্শেদ হক জখমি স্থানে তিন স্তর বিশিষ্ট ২৮টি সেলাই করেন। এ ঘটনায় পলাশ থানায় মামলা হয়েছে। যার মামলা নং ০১ তারিখ ৪ এপ্রিল ২০২২। বর্তমানে মামলাটি নরসিংদীর ডিবিতে তদন্তাধীন আছে জানালেন পলাশ থানার তদন্ত কর্মকর্তা।

ঘটনার বিবরন: গত ৩ এপ্রিল ২০২২ রোববার সন্ধার পর পাথর ব্যবসায়ী ও কাপড় ব্যবসায়ী দুই সহদর কামরুল ও খাইরুল কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে বাড়িতে ফেরার পথে ইসলামপাড়া বাজারের কাছাকাছি পৌঁছালে ১৪ থেকে ১৫ জন এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী তাদের পথ আটকিয়ে চাইনিজ কুড়াল ও রাম দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এ সময় তাদের সাথে থাকা ১১ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। আহতদের ডাক চিৎকারে প্রতিবেশি মুসা ও তার ছেলে স্বাধীন ও ইমন এগিয়ে আসলে তাদের ও কুপিয়ে জখম করে ওই সন্ত্রাসীরা। স্থানীয়রা রাত সাড়ে আটটার দিকে তাদের উদ্ধার করে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমারজেন্সী বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার লুবনা খানম খাইরুল ও মুসা মিয়ার মাথায় প্রায় ত্রিশ টার মত সেলাই করেন। আহত কামরুলের ডান হাতের কোপের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কোন প্রকার সেলাই না করে তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেন। কামরুলের স্বজনরা রাত পৌঁনে এগারটার দিকে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার হাতের মাংসের ভিতর ও বাহিরে আঠাশটি সেলাই করেন এবং ওই হাসপাতালে তাদের ভর্তি করেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by