প্রতিনিধি ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৫:৩১:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ
মাহফুজুর রহমান, চাঁদপুর প্রতিনিধি:
নিমার্ণের তিন দশক পেরিয়ে গেলেও খনন করা হয়নি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদা সেঁচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ছোট বড় প্রায় ৫৬১ কিলোমিটার খাল। ফলে জলাবদ্ধতায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর ফসলী জমি পানির নিচে থাকায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে কৃষকেরা। এতে করে ফসল উৎপাদন কমেছে প্রায় ২০ হাজার টন।
১৯৮৮ সালে নির্মিত চাঁদপুরের মতলব উত্তরের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরিণ মোট ৫৬১ কিলোমিটার দৈর্ঘের ছোট বড় খাল গুলো এখন পর্যন্ত খনন না হওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন কৃষকেরা।
“নদী ও খাল দখল বন্ধ করি, অধিক ফসল ঘরে তুলি” প্রতিপাদ্যকে উদ্দেশ্য করে সেচ প্রল্পটি অধিক খাদ্য- শস্য উৎপাদনের উদ্দেশ্য নির্মিত হলেও সেচ কার্যক্রমে ভাটা পড়ায় আবাদি জমি ধ্বংসের পথে।
উপজেলার ৬৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরীণ ১৭ হাজার ৫শ ৮৪ হেক্টর জমিকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি ১৩ হাজার ৬শ ২ হেক্টর জমিতে সেচের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনের উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নির্মাণ করা হলেও সেই জলাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপজেলাবাসি।
উপজেলার উদামদী,কালিপুর,এখলাসপুর,ডুবগী সহ মোট ৪টি পাম্প হাউজে মোট ৪শ৪২ দশমিক ১৯ কিউবিক মিটার পার সেকেন্ড পানি বাহির কিংবা প্রবেশ করানোর সক্ষমতা খাতা কলমে থাকলেও কার্যত তা বাস্তবতার ছোঁয়া পায়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে বোরো মৌসুমে ৭ হাজার হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে ৫ হাজার ৬শ ১৯ দশমিক ৭৪ হেক্টর জমিতে গ্র্যাভেটি সিস্টেমের মাধ্যমে পানি সেচ প্রদান করা হয় । বাকি ৮শ ৮৬ দশমিক ৮৬ হেক্টর জমিতে স্যালো টিউব এর মাধ্যমে কৃষক নিজেরা উত্তোলন করে এবং ৪শ ৯৩ দশমিক ৪০ হেক্টর জমিতে নিষ্কাশন খাল থেকে লো-লিফট পাম্পের মাধ্যমে সেচ প্রদান করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, কালিপুর ও উদামদি এই দুটি পাম্প হাউজ এর ৪ টি করে ৮ টি মেশিন একত্রে মাত্র ৩০ কিউসেক মিটার পানি সেচ করতে সক্ষম। তবে খাতা কলমের সক্ষমতা কোথায় হারিয়েছে সে বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তিনি বলেন, অবৈধ ভরাট খাল গুলো খনন ও দখল মুক্ত করতে তারা শিগ্রই পরিকল্পনা করছেন।
তবে নিষ্কাশন খাল, সেচ খাল, প্রধান খাল, টারশিয়ারী খাল ও সেকেন্ডারি খাল সমূহের ৫শ ৬১ কিলোমিটার এর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ভাবে ভরাট কারার ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি সরিয়ে নিতে যেমন বাধার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে তেমনি বোরো মৌসুমে কৃষকের জমিতে পানি পৌছে দিতেও সক্ষমতা হারিয়েছে কতৃপক্ষ।
৩০টি পানি ব্যবস্থাপনা দল, ৬ টি এ্যাসোসিয়েশন ও একটি ফেডারেশনের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লজিষ্টিক সাপোর্ট দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সরকার মোঃ আলাউদ্দিন । অতি দ্রুত খাল গুলো খনন ও অবৈধ দখল মুক্ত করে অধিক ফসলের নিশ্চয়তা দিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কার্যকর ভুমিকা পালন করতে অনুরোধ জানান তিনি।
অপরদিকে উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাবে খালগুলো বেদখল হচ্ছে। এছাড়াও প্রভাবশালী মহল অবৈধ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছেন বালু ব্যবসা । ফলে খালের গতিপথে বাধাসৃষ্টি সহ নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমি।
সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরীণ ১শ ২৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নিষ্কাশন খাল, ২১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের সেচ খাল , ৩৪ কিলোমিটার দৈর্ঘের প্রধান খাল ,৬৪ কিলোমিটার দৈর্ঘের সেকেন্ডারি খাল ও ১শ ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘের টারশিয়ারী খাল সহ কোন একটি খাল গত ৩৩ বছরেও খনন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
খাল খননের বিষয় গুলো উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সেঁচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিত ভাবে জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজী শরিফুল হাসান।
এদিকে জলাবদ্ধতার ফলে আউশ ধানের উৎপাদন মাত্র ২ হাজার হেক্টর জিমিতে নেমে এসেছে। এছাড়াও বোরো উৎপাদনে জমির পরিমাণ নেমে এসেছে ৯ হাজার হেক্টরে। জানিয়েছেন, মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি অফিসার মো: সালাউদ্দিন ।
ক্যাপশন: বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভ্যন্তরে বন্যা ! নৌকা নিয়ে ব্যস্ত কৃষকেরা।