ঢাকা

তেলসংকটের বাহানা, গন্তব্যে পৌঁছায় না বিআরটিসি’র দ্বিতল বাস

  প্রতিনিধি ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ , ৮:২২:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ

এস এম বাবুল

গাজীপুর বাস ডিপো থেকে রাজধানীর মতিঝিল রুটে বিআরটিসি’র বাইশটি (কমবেশি) দ্বিতল বাস চলাচল করে। কিন্তু তেলের সংকট দেখিয়ে অনেক চালক গন্তব্যের শেষ প্রান্তে না গিয়ে মাঝপথ থেকে বাস ঘুরিয়ে দেন। এতে বিড়ম্ভনায় পড়েন এ রুটে চলাচলকারি যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিযোগ বাস গুলিস্থান, মতিঝিল যাওয়ার কথা থাকলেও প্রায়ই মাঝপথ থেকে ঘুরে যায়, নিরুপায় হয়ে অন্য বাসে উঠতে হয়। এতে বয়স্ক লোক, মহিলা ও শিশুরা বেশি ভোগান্তিতে পড়ে। বাসের যাত্রী মনিরুল জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে বিআরটিসির বাসে উঠছেন পল্টন নামবেন। কিন্তু বাস কাওরানবাজার থেকে ঘুরিয়ে দেওয়ায় বাধ্য হয়ে অন্য বাসে উঠার অপেক্ষায় করছেন। বিরক্তির সুরে তিনি এ প্রতিবেদককে বললেন, সরকারি বাসের সেবার মান মোটেই ভালো না।
গাজীপুর ছেড়ে মতিঝিল যাওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ বাস রাজধানীর ফার্মগেট, কাওরানবাজার আবার কখনো মহাখালী এসে গাজীপুরে ঘুরে যায়।এতে অভাবনীয় দুর্ভোগে পড়ে এ রুটে চলাচলকারি যাত্রীরা।
যাত্রী ভোগান্তি নিয়ে কথা হয় বিআরটিসি বাসের চালকের সাথে, দ্বিতল বাস মতিঝিল পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও কেন আপনারা মাঝপথে ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। চালকের জবাব, তেল সংকটে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়না। একট্রিপে ৩৫ লিটার এবং দুইট্রিপে ৬৫ লিটার তেল নির্ধারণ থাকায় এই তেলে গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। বাধ্য হয়েই আমরা মাঝপথ থেকে বাস ঘুরিয়ে ডিপোতে যাই। আরেক চালক বলেন, যানজটে গাজীপুর থেকে গুলিস্থান আসতে প্রায় তিন ঘন্টার ও বেশি সময় লেগে যায়। আবার গুলিস্থান থেকে গাজীপুর যেতে ও তিন ঘন্টার বেশি সময় লাগে। এ ভাবে যাওয়া-আসায় প্রায় ছয় থেকে সাত ঘন্টা লেগে যায়। এতে একট্রিপে তেল খরচ হয় ৪৫ লিটারের মতো। বাড়তি ১০ লিটার তেলের টাকা বেতন থেকে কেটে নেয়া হয়। নিরুপায় হয়ে বাস মাঝপথ থেকে ঘুরিয়ে নিতে বাধ্য হই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ চালক আরো বলেন, গাজীপুর-মতিঝিল রুটে এক ট্রিপের জন্য সেল নির্ধারণ করা আছে সাত হাজার নয়শ টাকা। আর দুই ট্রিপের জন্য সেল নির্ধারণ বার হাজার চারশ টাকা। বর্তমান যানজটের যে অবস্থা তাতে দুই ট্রিপ দেওয়া সম্ভব হয় না আর এক ট্রিপে যে আয় হয় তা থেকে কন্ডাক্টরের হাজিরা ও পকেট খরচ বাদ দিয়ে যা থাকে তাতে সেল জমা দেয়াই কষ্টসাধ্য। এ রুটের আরেক চালক বলেন, বিআরটিসির কাঙ্খিত সেবা পেতে চায় জনগণ। কিন্তু কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে আমরা কাঙ্খিত সেবা দিতে পারিনা। আমাদেরকে সেল নির্ধারণ করে দেওয়া হয় কিন্তু বিআরটিসির কন্ডাক্টর দেওয়া হয়না। বাইরের লোক দিয়ে ভাড়া তুলতে হয় এবং তাদের বেতন দিয়ে যা থাকে তাতে সেলের টাকা জমা দেওয়াই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। সরকারি কন্ডাক্টর দেওয়ার জন্য চালকদের পক্ষ থেকে বারবার দাবি জানানো হলেও কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেননি। এছাড়া বিআরটিসির অর্গানোগ্রামে চালকদের উপর সেল নির্ধারণ করার কোন নিয়ম না থাকলেও অন্যায়ভাবে চালকদের উপর তা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর-মতিঝিল রুটে চলাচলকারি দ্বিতল বাসের সমস্যা নিয়ে কথা হয় গাজীপুর বাস ডিপোর ম্যানেজার কামরুজ্জামানের সাথে। তিনি বলেন, মাঝপথ থেকে বাস ঘুরে আসার বিষয় তিনি জানেন না। তাছাড়া এ রুটে শুধু গাজীপুর বাস ডিপোর বাস চলে না। অন্যান্য ডিপোর বাসও চলে। এ মুহূর্তে গাজীপুর ডিপোর সাতটি বাস এ রুটে চলছে। কিছু বাস মেলা ও ইজতেমায় চলছে। চালকদের কথা সত্য নয় জানিয়ে ডিপো প্রধান বলেন, চালকদের লস হলে তারা আন্দোলন করতো। ট্রিপপ্রতি যে তেল নির্ধারণ করা আছে তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। প্রতিট্রিপে বত্রিশ-তেত্রিশ লিটার তেল লাগে। চালকেরা শুধু পিক আওয়ারে বাস চালাতে চায় তারা অফপিক আওয়ারে বাস চালাতে চায় না। তিনি আরো বলেন, গাজীপুর থেকে মতিঝিল বিয়াল্লিশ কিলোমিটার। তাছাড়া এখন আগের চেয়ে যানজট অনেক কম। সকাল সাতটায় গাজীপুর ছেড়ে গেলে সন্ধা সাতটার মধ্যে দুইট্রিপ দেওয়া সম্ভব হলেও চালকরা একট্রিপেই চৌদ্দ ঘণ্টা কাটিয়ে দেন। এতেই বুঝা যায়, চালকেরা কতটা কর্পোরেশনের স্বার্থে কাজ করে। এ রুটে সরকারি কন্ডাক্টর না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এ বিষয় তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। কন্ডাক্টর প্রসঙ্গে কর্র্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার অনুরোধ জানান গাজীপুর ডিপোর এ কর্মকর্তা।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by