চট্টগ্রাম

যোগাযোগ ব্যাবস্থায় নতুন দার উন্মোচন,বান্দরবান -কেরানিহাট সড়ক

  প্রতিনিধি ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ , ৪:২৬:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

মোঃ শহীদুল ইসলাম,বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি :

# ২৬৬.৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটিতে রয়েছে ২১টি ব্রিজ,১৫টি কালভার্ট,৩টি যাত্রী ছাউনি,২১ কিলোমিটার ড্রেনেজ নিস্কাসন অবকাঠামো,৬০২ মিটার রিজিড পেভমেন্ট ওয়ার্ক,ও সড়ক বিভাগের পরিদর্শন বাংলো।

পাহাড় কন্যা বান্দরবান,পাহাড় ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পর্যটন নগরী বান্দরবান দেশের সকল জেলার ভ্রমন পিপাসুদের কাছে সুপরিচি।সাম্প্রতিক সময়ে জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটের অপার সৌন্দর্য দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করেছে।
এই অঞ্চলে সড়ক পথে যাতায়াত একমাত্র মাধ্যম কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক।এই সড়কটির গড প্রশস্ততা পূর্বে মাত্র ৫.৫৮ মিটার ছিল।এছাড়া বিভিন্ন যানবাহন এবং পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ অনুযায়ী সড়কের প্রশস্ততা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।বিদ্যমান সড়কটি নিচে থাকায় বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সড়কটির অধিকাংশ তলিয়ে যেতো।ফলে বান্দরবানের সাথে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো। ফলশ্রুতিতে সড়কটিতে বিদ্যমান ব্রিজ ও কালভার্ট সমূহ পুনর্নির্মাণ সহ সড়কটির প্রসস্থতা বৃদ্ধি এবং যথাযথ মান ও উচ্চতায় উন্নীতকরণ করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ে।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে তারই দূরদর্শী ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্তে বান্দরবান অঞ্চলে একটি নিরাপদ টেকসই ব্যায় সাশ্রয়ী রোড় নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে ২৩শে অক্টোবর ২০১৮ সালে কেরানিহাট -বান্দরবান জাতীয় মহাসড়ক (এন১০৮) যথাযথ মান,প্রশস্থতা ও উচ্চতায় উন্নীতকরণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এর তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটির কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্নের জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর অর্পিত হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটেলিয়নের সকল সদস্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই উক্ত প্রকল্পের সকল কাজ সফলতার সাথে গুনগত মান বজায় রেখে সম্পন্ন করে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নকালীন সময়ে ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের অধিনস্থ ৫ ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়ন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চত করে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সড়কটি মহাসড়ক মানে উন্নীত করা বিদ্যমান সরু পুরাতন ও জরাজীর্ণ সড়কটি পুনঃনির্মাণের মাধ্যমে একটি নিরাপদ টেকসই এবং ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা।
২৬৬.৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটিতে রয়েছে ২১টি ব্রিজ,১৫টি কালভার্ট,৩টি যাত্রী ছাউনি,২১ কিলোমিটার ড্রেনেজ নিস্কাসন অবকাঠামো,৬০২ মিটার রিজিড পেভমেন্ট ওয়ার্ক,ও সড়ক বিভাগের পরিদর্শন বাংলো।এছাড়া সম্পুর্ন ২২.৫ কি.মি. গড় প্রসস্থতায় ৫.৫৮ মিটার হতে ৭.৩ মিটারে উন্নীতকরণের মাধ্যমে সড়কটি মহাসড়ক মানে উন্নীত করা হয়েছে।সড়ক রক্ষায় ১২১০ মিটারে আরসিসি প্যালাসাইডিং কাজসহ পাহাড়ের ধ্বস প্রতিরোধে নেয়া হয়েছে ১২৬৩ মিটার রক্ষা প্রদান কাজ।ঝুঁকিপূর্ণ বাক সোজাকরণ সুপার এলিভেশন সংশোধন রোড জিওমেট্রি সংশোধন নিরাপত্তা মূলক রেইল,গাইড পোস্ট,সাইন পোস্ট ও অবজারভেটরি মিররের ব্যবহারে সড়কটিতে যেমন দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে তেমনি নিরাপদ সড়ক হিসেবে পর্যটননগরী বান্দরবানকে সুখ্যাতি এনে দেয়ার পাশাপাশি পর্যটকদের দ্রুত সময়ে গন্তব্য স্থলে পৌছা সম্ভব হবে।
স্থানীয় বসবাসকারী জনসাধারণ মনে করেন সড়কটি মহাসড়ক মানে উন্নীত করার মাধ্যমে এই এলাকার জনসাধারণের জন্য একটি নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হলো।এর মাধ্যমে দুর্গম বান্দরবানবাসী তাদের নিজস্ব উৎপাদিত কৃষিপণ্য কম খরচে এবং খুবই অল্প সময়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে উপকৃত হবে। এই সড়কটির ফলে পার্বত্য বান্দরবানের জনসাধারণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ ও পর্যটন শিল্পে ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে মনে করেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর মোঃ সাদমান রহমান বলেন বান্দরবানবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিলো বান্দরবান – কেরানিহাট এই সড়কটির মানোন্নয়নের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যাবস্থা আরো নিরাপদ হওয়া।তিনি বলেন প্রকল্পের কাজে সেনাবাহিনীর যারা নিয়োজিত ছিলো তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষের আগেই আমরা শতভাগ কাজ শেষ করতে পেরেছি।
প্রকল্পের কাজ সম্পুর্ন শেষ এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় বান্দরবান – কেরানিহাট মহা সড়ক।
সংশ্লিষ্টদের দাবী সড়কটি সংস্কারের ফলে স্থানীয় বসবাসকারী জনসাধারণ ও জেলায় আগত পর্যটকদের ভ্রমণে আরো বেশি আনন্দ দিবে,যোগাযোগ ব্যাবস্থা সহজ হওয়ার কারনে পরিবর্তন আসবে মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও জীবিকায় সম্ভব হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by