বরিশাল

অবাধে কাটা হচ্ছে বিষখালী নদীর তীরের মাটি

  প্রতিনিধি ১৬ এপ্রিল ২০২১ , ৬:১৫:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি:

সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অবাধে কাটা হচ্ছে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বিষখালী নদীর পাড়ের মাটি। এসব মাটি কেটে নিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইটভাটায়। দলীয় প্রভাব দেখিয়ে খোদ জনপ্রতিনিধিরাই তাদের ইটভাটায় ব্যবহারের জন্য নদীর তীরের মাটি কেটে নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদীর তীরের মাটি কাটার কারণে পাড়সংলগ্ন এলাকা ভাঙন ঝুঁকিতে আছে। বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পরিবেশ। অন্যদিকে নদীর তীর ও ফসলি জমির মাটি ব্যবহারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষিত হচ্ছে। জমির মাটি কাটায় ফসল উৎপাদনের সক্ষমতাও কমে যাচ্ছে।

বিষখালী নদীরতীর থেকে মাটি কেটে উপজেলার দুটি ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

এলাকাবাসীর দাবি, উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা ইটভাটা দুটির মালিক। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তারা নদী ও নদীরতীরের মাটি কেটে ভাটায় ব্যবহার করছেন। ফলে স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে সাহস পায় না। স্থানীয় সূত্র জানায়, রাজাপুরের বিষখালীর নদীর তীরে অবস্থিত বড়ইয়া ব্রিকস ও উত্তমপুর ব্রিকস বছরে ছয় মাস ইট উৎপাদন করে। প্রতিটি ইটভাটা ছয় মাসে ২০-৩০ লাখ ইট উৎপাদন করে। দুটি ইটভাটাতেই ইট প্রস্তুতের জন্য বিষখালী নদী ও নদীরতীরের মাটি ব্যবহার করা হয়। বড়ইয়া ব্রিকস নামের ইটভাটায় ঝালকাঠি জেলা আ.লীগের সহসভাপতি ও রাজাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বড় একটি শেয়ার রয়েছে।

 

অন্যদিকে উত্তমপুর ব্রিকসে অংশীদার হিসেবে আছেন রাজাপুর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। আ.লীগের এ দুই নেতার প্রভাবে দুটি ইটভাটায় সরকারি খাসজমি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির মাটি কেটে ইট প্রস্তুতে ব্যবহার হয়। নদীপাড়ের জমির মালিকরা ইটভাটার মালিকদের কাছে জমি ভাড়া দেন। সেসব জমি থেকে মাটি উত্তোলন করে ইট প্রস্তুত করা হয়। চল্লিশকাহনিয়া, বাদুড়তলা ও বড়ইয়া ইউনিয়নের পালট গ্রামের ১০টি স্থান থেকে ইটভাটার জন্য মাটি কাটা হয়। প্রতি শতাংশ জমি ৫ হাজার টাকা করে ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিষখালী নদীর চল্লিশকাহনিয়া লঞ্চঘাট এলাকা, বাদুড়তলা ও বড়ইয়া ইউনিয়নের পালট গ্রামে অবাধে চলছে মাটিকাটা। বিষখালী নদীপাড় থেকে শ্রমিকরা এসব মাটি কেটে ট্রলার বোঝাই করছেন। মাটি কাটার ফলে নদীপাড়ের বিভিন্ন স্থানে গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। এর প্রভাবে নদীর পাড়ের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জমির মালিক বলেন, নদী তীরের জমি সবসময় ভাঙনের আশঙ্কায় থাকে। তাই কিছু টাকা পাওয়ার আশায় জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছি। আগামী বর্ষায় পলি পড়ে ওই স্থান আবার ভরাট হয়ে যাবে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ফেরদৌস হাওলাদার বলেন, রাজাপুরের বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে এরই মধ্যেই মঠবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বাদুড়তলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের কয়েকটি কক্ষ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যেকোনো সময় হারিয়ে যাবে পুরো স্কুল এবং স্কুলের পাশে থাকা জামে মসজিদ।

 

 

এছাড়া বাদুড়তলা-পুখরীজানা, মানকি সুন্দর সড়ক, বাদুড়তলা-চল্লিশকাহনিয়া সড়কটিও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ অব্যাহত ভাঙনের মধ্যে ইটভাটায় নদীপাড়ের মাটি কেটে নিলে ভাঙন আরো বৃদ্ধি পাবে।

এ বিষয়ে রাজাপুর বড়ইয়া ব্রিকসের মালিক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান বলেন, মাটি ছাড়া ইট উৎপাদন সম্ভব নয়। আমরা ক্রয় করা জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার করছি। তবে ঠিক নদীপাড় থেকে মাটি কাটা হয় না।

 

রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন বলেন, স¤প্রতি বিষখালী নদীর তীর থেকে মাটি কাটায় উত্তমপুর ব্রিকসকে জরিমানা করেছি। এর পরও বিষখালী নদীর মাটি কাটা বন্ধ না হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ইটভাটা বন্ধ করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by