শিক্ষা

পবিত্র কোরআন দেড় বছরে হাতে লিখে তাক লাগালেন ঢাবিছাত্রী

  প্রতিনিধি ২০ জুন ২০২২ , ৬:১৮:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

করোনাকালীন সময়ে গৃহবন্দি থেকেও সময়টাকে কাজে লাগিয়ে নিজের সম্ভাবনা ও মেধার জানান দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৪-১৫ সেশনের ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম দিয়া।

মহামারীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এই সময়টাতে পুরো কোরআন শরীফ হাতে লিখেছেন তিনি। তারপর নিজ হাতে লেখা সেই পাণ্ডুলিপিগুলো বাঁধাই করে রূপ দিয়েছেন পূর্ণাঙ্গ কোরআনে। এখন দেশের ৫০০ মসজিদ, মাদরাসায় তিনি তার হস্তলিখিত কোরআন উপহার দিতে চান।

সোমবার (২০ জুন) জারিন তাসনিম দিয়া জানিয়েছেন তার নিজ হাতে কোরআন লেখার পেছনের গল্প ও স্বপ্নের কথা।

কেন এই উদ্যোগ কিংবা এই উদ্যোগের শুরুর গল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে দিয়া বলেন, ২০২০ সালের মার্চে যখন করোনার কারণে ঘরবন্দি হয়ে গেলাম, তখন ভাবলাম সময় কাটানোর জন্য একটা উদ্যোগ নিই। তখন এই কাজ শুরু করলাম। আমি যে শেষ করতে পারব এই উদ্দেশ্যে শুরু করিনি। আমি ভাবলাম যে সিরিয়াল ধরে লিখি, যা পারি। কিন্তু এভাবে কখন যে ৫ পারা পর্যন্ত লেখা শেষ হয়ে গেল, আমি বুঝতে পারিনি। তখন তো বাইরে যাওয়া হয় না, বসে বসে প্রতিদিন লিখতে থাকি। এটার প্রতি এক প্রকার নেশা হয়ে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, আমি হাফেজ না কিংবা মাদ্রাসাতেও পড়াশোনা করিনি। তবে কোরআন পড়তে পারতাম। আঙুল দিয়ে ধরে দেখে দেখে লিখতে দেড় বছর সময় লেগেছে। এরপর সেটা ডিজাইন করলাম এবং একজন হাফেজের সাথে আলাপ করলাম কীভাবে, কী করা যায়। উনি বললেন, এটা খুবই ভালো কাজ হয়েছে। এরপর ৩০ জন হাফেজ আমার এই পাণ্ডুলিপি দেখেন। ৬৫১ পৃষ্ঠার এই কোরআন শরিফ উনারা দেড় মাস দেখে সংশোধন করে আমাকে দেন। তারপর উনাদের থেকে মতামত নিয়ে প্রিন্ট করি।

৫০০ কপি বিতরণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আমি এক কপি প্রিন্ট করি। তারপর আরো কয়েক কপি করি, আমার মা-বাবার হাতেও তুলে দিই; যেটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এখন আমার চিন্তা-ভাবনা অন্তত ৫০০ কপি করে বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা এবং যারা নিয়মিত কোরআন পড়ে তাদের মাঝে বিতরণ করব, যাতে তারা পড়লে আমার সওয়াব হয়। আমাকে কেউ ভুলে গেলেও আমার এই কাজকে কেউ যেন ভুলে না যায়- এখানেই আমার স্বার্থকতা।

সবার এত এত ভালোবাসা পেয়ে আরও অনেক বেশি ভালো লাগছে। যদিও কেউ কেউ আবার নেগেটিভ কমেন্টও করেছেন।

মা-বাবার অবদানের কথা উল্লেখ করে দিয়া বলেন, আমার অনুপ্রেরণা আমার বাবা-মা। তাদের অনুপ্রেরণা ছাড়া আসলে এটা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। আমি যখন লিখেছি বাবা আমাকে কাগজ কিনে দিয়েছেন, মা চেক করে দিয়েছেন। তারা সবসময় সাহস যুগিয়েছেন। সর্বোপরি পরিবারের সবাই সাপোর্ট দিয়েছে।

জারিন তাসনিম দিয়া বলেন, আমি ছোট থেকে ইসলামি পরিবেশে বড় হয়ে উঠিনি। আমি স্কুল-কলেজে পড়েছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। সবার মতো সাধারণভাবেই পড়াশোনা করতাম। তবে আমি এই কাজটি যখন করে ফেলেছি এবং ইসলামের কিছু অর্থ যখন আমি বুঝেছি তখন অর্থসহ খতম করেছি। আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা করছি ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে চলতে এবং যতটুকু সম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করব।

অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যায় না। কোরআন লিখতে আমার অনেক ভালো লাগা কাজ করেছে। আর এই ভালো লাগার কারণেই আমি শেষ করতে পেরেছি। আর সবার এত এত ভালোবাসা পেয়ে আরো অনেক বেশি ভালো লাগছে। যদিও কেউ কেউ আবার নেগেটিভ কমেন্টও করেছেন। এটা লোক দেখানো কাজ ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে আমার মনের মধ্যে তো আর এসব নেই, তাই এসব নিয়ে এত ভাবি না।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by