চট্টগ্রাম

বিনা নোটিশে জোরপূর্বক ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের অভিযোগ

  প্রতিনিধি ১৪ জুন ২০২৩ , ৭:৫২:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে জেলা পরিষদের লিজকৃত একটি ভূমি থেকে বিনা নোটিশে ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার অভিযোগ উঠেছে। জেলা পরিষদ ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে অনৈতিকভাবে এমন উচ্ছেদ করেছে বলে অভিযোগে জানা গেছে। এতে উপজেলার পানপাড়া বাজারের ১০ টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

রবিবার রাতে নিজস্ব লোক দিয়ে

ব্যবসায়ীদের জোরপূর্বক সরিয়ে দিয়ে লিজকৃত ওই ভূমিটি জেলা পরিষদের নামে দখলে নেয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজুল্লাহ জিসান।

পরে ওই রাতেই জেলা পরিষদের নির্মাণাধীন মার্কেট এর একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয় তার লোকেরা।

যদিও জেলা পরিষদ বলছে, তাদের নির্দেশেই সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। একই সাথে আইনী জটিলতা এড়াতে লিখিত নোটিশ দেয়া হয়নি বলে জানায় জেলা পরিষদ।

 এঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা আইনী সহযোগীতা পাওয়ার দাবী জানিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ভুক্তভুগীদের অভিযোগে জানা যায়, জেলার রামগঞ্জের পানপাড়া বাজারের রামগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর সড়কের পূর্ব পাশে পানপাড়া মৌজার জে.এল নং-৫৯, সি.এস দাগ নং-০৮, আর.এস নং-২২ এর ৫২×১০ বর্গফুট(৫২০ স্কয়ার ফিট) এবং ২৭×১২ বর্গফুট (৩২৪ স্কয়ার ফিট) জেলা পরিষদের ভূমি স্থানীয় মসজিদের নামে কবুলিয়ত করা ছিল। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্ল্যা পাটোয়ারী জেলা পরিষদের মাধ্যমে খরিদ করে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে মোহাম্মদ উল্ল্যা চেয়ারম্যান তার সেজো ছেলে ফয়েজ আহম্মেদের নামে জেলা পরিষদের মাধ্যমে হস্তান্তর করে। বাকি ২৩×১২ বর্গফুট (২৪০ স্কয়ার ফিট) ভূমি চাঁদমিয়া সওদাগর এর নামে কবুলিয়ত ছিল। সেটিও ২০০৮ সালে জেলা পরিষদের মাধ্যমে ক্রয় করে নেন তারা। ২০১১ সালে এখানে দোকান নির্মাণ করা হয় এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করা হয়। এর পরবর্তীতে তারা খাজনা পরিশোধ করতে চাইলেও জেলা পরিষদ খাজনা গ্রহন করেনি। গত ২৬ শে অক্টোবর ২০২১ সালে তাদের ইজারা বাতিল করে নোটিশ পাঠায় জেলা পরিষদ। তারপর আবার পুনরায় আবেদন করে তারা। এর প্রেক্ষিতে জেলা পরিষদ শুধুমাত্র ১৪ ফিট ও ১০ ফিট দুটি রাস্তা দেয় এবং পরবর্তীতে যদি লিজ দেওয়া হয় তাহলে তাদেরকেই দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। যেহেতু পিছনের জমি এবং স্থাপনা ফয়েজুল্লাহ গংদের। সেহেতু লিজ পাওয়ার অগ্রাধিকারও তাদের রয়েছে। বিগত ১২ই জুন কোন প্রকার নোটিশ ছাড়া আকস্মিক ওই জায়গায় ভাড়াটিয়া দোকানদারদের দোকান থেকে বের করে দেয়। একই সাথে জোরপূর্বক জায়গার ওপর স্থাপনা তৈরির কাজ আরম্ভ করে।

এদিকে ব্যবসায়ীদের কোন সময় না দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নোটিশ না দিয়েই তাদেরকে দোকান থেকে বের করা দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া অভিযোগ করেন, আগে নোটিশ দিলে আমরা নিজেরা মালামাল সরিয়ে নিতাম কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ দেয়নি। আমরা এক সপ্তাহ আগেও বন্দোবস্তের জন্য জেলা পরিষদ গিয়েছি। কিন্ত আমাদের নতুন করে বন্দোবস্ত দেয়নি। ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজ উল্যা জিসান এসে দোকান ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন। এখন আমরা কই যাবো, সংসার চালাবো কিভাবে? একই কথা বলছিলেন অন্য ব্যবসায়ীরাও।

জেলা পরিষদ থেকে লীজ নেওয়া মো: ফয়েজ আহমেদ জানান, পানপাড়া বাজারে জেলা পরিষদের প্রস্তাবিত নির্মাণাধীন মার্কেটের জন্য আমাদের ৮টি দোকান কোন রকমের নোটিশ এবং ক্ষতিপুরন ছাড়া গতকাল(১১ই জুন) রাত ৯ টার দিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেত্বিতে আমাদের দোকান থেকে ভাড়াটিয়াদেরকে জোর পূর্বক মালামালসহ বের করে দেওয়ার সময় আমরা পুলিশ এবং সাংবাদিককে অবগত করি। এই ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে উনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় কাজ করছেন বলে তাদেরকে জানায়।

এদিকে স্থানীয় লামচর ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজ উল্যাহ জিসান বলেন, জেলা পরিষদ তাদের জমিতে মার্কেট নির্মাণ করবে। তাই পূর্বের সকল লীজ বাতিল করে উচ্ছেদ  করা হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে প্রশাসনের লোকজন আমাকে ডেকেছে, তাই গিয়েছি। কোন ব্যবসায়ীকে আমি সরে যেতে বলেনি।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, জেলা পরিষদ সকল জমি একশনা লীজ দিয়ে থাকে। তারা গত ৪/৫ বছর লীজের টাকা পরিশোধ করেনি। তাই এমনিতেই লীজ বাতিল হয়েছে। নতুন করে নোটিশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by